মাল্টিপল মাইলোমা কি নিরাময় সম্ভব? বর্তমান চিকিৎসা পদ্ধতির সাফল্য

মাল্টিপল মাইলোমা হলো একধরনের ব্লাড ক্যান্সার, যা পুরোপুরি নিরাময়যোগ্য নয়। তবে আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে রোগ নিয়ন্ত্রণ ও দীর্ঘায়ু সম্ভব হচ্ছে।

Team Haematologist Arif

9/28/20251 min read

রক্তের জটিল রোগগুলোর মধ্যে মাল্টিপল মাইলোমা অন্যতম। এটি একধরনের ব্লাড ক্যান্সার যা হাড়ের মজ্জায় থাকা প্লাজমা সেলের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির মাধ্যমে গড়ে ওঠে। প্লাজমা সেল আমাদের শরীরকে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য অ্যান্টিবডি তৈরি করে। কিন্তু যখন এই কোষগুলো ক্যান্সারে রূপ নেয়, তখন স্বাভাবিক অ্যান্টিবডি তৈরি ব্যাহত হয় এবং শরীর নানা জটিল সমস্যায় ভোগে।

অনেকেই জানতে চান, মাল্টিপল মাইলোমা কি পুরোপুরি নিরাময়যোগ্য? আধুনিক চিকিৎসা কতটা কার্যকর? এই ব্লগে আমরা সেই বিষয়গুলো নিয়েই আলোচনা করবো।

মাল্টিপল মাইলোমা কী?

মাল্টিপল মাইলোমা হলো এক ধরনের ম্যালিগন্যান্ট প্লাজমা সেল ডিসঅর্ডার, যেখানে অস্বাভাবিক কোষ হাড়ের মজ্জায় জমে যায় এবং হাড়, কিডনি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

এটি সাধারণত ৫০ বছরের বেশি বয়সী মানুষের মধ্যে বেশি দেখা যায়। পুরুষদের তুলনায় নারীদের মধ্যে কিছুটা কম হলেও ঝুঁকি উভয়ের জন্যই রয়েছে।

রোগের প্রধান লক্ষণ

মাল্টিপল মাইলোমা ধীরে ধীরে বাড়ে এবং প্রাথমিক পর্যায়ে অনেক সময় কোনো লক্ষণ বোঝা যায় না। তবে সাধারণত দেখা যায়:

  • হাড়ের ব্যথা – বিশেষ করে পিঠ ও কোমরে

  • সহজে হাড় ভেঙে যাওয়া

  • রক্তশূন্যতা (অ্যানিমিয়া)

  • সংক্রমণের প্রবণতা বেড়ে যাওয়া

  • কিডনির কার্যক্ষমতা হ্রাস পাওয়া

  • শরীর দুর্বলতা ও ক্লান্তি

মাল্টিপল মাইলোমা কি পুরোপুরি নিরাময়যোগ্য?

বর্তমান পর্যন্ত চিকিৎসাবিজ্ঞানে মাল্টিপল মাইলোমা স্থায়ী নিরাময় নেই। তবে চিকিৎসা পদ্ধতির উন্নতির কারণে রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হচ্ছে এবং অনেক রোগী দীর্ঘ সময় সুস্থ জীবনযাপন করতে পারছেন।

আসলে চিকিৎসার লক্ষ্য হলো:

  1. রোগের অগ্রগতি থামানো

  2. জটিলতা নিয়ন্ত্রণ করা

  3. রোগীর আয়ু ও জীবনমান বৃদ্ধি করা

বর্তমান চিকিৎসা পদ্ধতি
১. কেমোথেরাপি

প্রাথমিকভাবে কেমোথেরাপি ব্যবহার করা হয়, যা ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করে। বর্তমানে নতুন প্রজন্মের কেমোথেরাপি ওষুধ বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখছে।

২. টার্গেটেড থেরাপি

এটি নির্দিষ্ট ক্যান্সার কোষের বিরুদ্ধে কাজ করে। টার্গেটেড ড্রাগ রোগীর শরীরে তুলনামূলক কম ক্ষতি করে এবং ফলাফল অনেক ক্ষেত্রে সন্তোষজনক হয়।

৩. ইমিউনোথেরাপি

শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ক্যান্সার কোষের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম হয় এ ধরনের চিকিৎসার মাধ্যমে। এটি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বহুল আলোচিত এবং সফল একটি পদ্ধতি।

৪. স্টেম সেল ট্রান্সপ্লান্ট

নির্বাচিত রোগীদের জন্য অটোলোগাস স্টেম সেল ট্রান্সপ্লান্ট একটি সম্ভাবনাময় চিকিৎসা। এটি দীর্ঘমেয়াদে রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখার সম্ভাবনা বাড়ায়।

৫. সহায়ক চিকিৎসা
  • হাড়ের শক্তি রক্ষা করার জন্য ওষুধ

  • রক্তশূন্যতা কমানোর চিকিৎসা

  • কিডনির সমস্যা নিয়ন্ত্রণ

  • সংক্রমণ প্রতিরোধ ব্যবস্থা

চিকিৎসার সাফল্য
  • আগের তুলনায় রোগীর আয়ু ২-৩ গুণ বেড়েছে।

  • অনেক রোগী চিকিৎসার মাধ্যমে ৮-১০ বছর বা তার বেশি সময় ভালোভাবে জীবনযাপন করছেন।

  • উন্নত দেশে আধুনিক থেরাপির কারণে আরও ভালো ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে।

তবে চিকিৎসার সাফল্য নির্ভর করে রোগের পর্যায়, রোগীর বয়স, স্বাস্থ্য অবস্থা ও চিকিৎসা নেওয়ার সময়ের উপর।

রোগীর জন্য কিছু পরামর্শ
  • চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো বিকল্প বা লোকজ চিকিৎসা চেষ্টা করবেন না।

  • নিয়মিত ফলোআপ করুন।

  • স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন বজায় রাখুন।

  • সংক্রমণ থেকে বাঁচতে সতর্ক থাকুন।

মাল্টিপল মাইলোমা এখনো পুরোপুরি নিরাময়যোগ্য নয়। তবে আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি রোগীদের জন্য আশার আলো হয়ে এসেছে। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা শুরু করলে রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব এবং রোগী অনেক বছর সুস্থভাবে জীবনযাপন করতে পারেন।

আপনি বা আপনার প্রিয়জন যদি মাল্টিপল মাইলোমা বা এ ধরনের রক্তের রোগে ভুগে থাকেন, তবে দেরি না করে অভিজ্ঞ হেমাটোলজিস্ট চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। নিয়মিত চেকআপ ও সঠিক চিকিৎসা আপনার জীবনকে অনেক বেশি নিরাপদ করতে পারে।

সরাসরি হেমাটোলজিস্ট আরিফ উর রহমানের এ্যাপয়েন্টমেন্ট নিন