অ্যানিমিয়া থেকে ক্যান্সার? জেনে নিন আসল কারণ এবং সঠিক পদক্ষেপ
অ্যানিমিয়া সাধারণত রক্তশূন্যতা, তবে দীর্ঘস্থায়ী বা অস্বাভাবিক অ্যানিমিয়া হতে পারে ব্লাড ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ। আসল কারণ ও সঠিক পদক্ষেপ জানুন এখনই।
Team Haematologist Arif
8/28/20251 min read


বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অ্যানিমিয়া একটি সাধারণ স্বাস্থ্যসমস্যা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, বিশ্বে প্রায় ১.৬ বিলিয়ন মানুষ কোনো না কোনোভাবে অ্যানিমিয়ায় ভুগছেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটি আয়রনের ঘাটতি, রক্তক্ষরণ বা ভিটামিন ঘাটতির কারণে হয়ে থাকে। তবে সব অ্যানিমিয়া এক রকম নয়। কিছু ক্ষেত্রে অ্যানিমিয়া আসলে অন্য কোনো গুরুতর রোগের সতর্কবার্তা, বিশেষ করে ব্লাড ক্যান্সারের ইঙ্গিত হতে পারে।
অনেকেই প্রশ্ন করেন - অ্যানিমিয়া কি ক্যান্সারে রূপ নেয়? নাকি এটি ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ? সঠিক তথ্য না জানলে চিকিৎসা বিলম্বিত হতে পারে, যা রোগীর জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তাই এই ব্লগে আমরা জানবো অ্যানিমিয়ার আসল কারণ, ক্যান্সারের সাথে এর সম্পর্ক এবং সঠিক পদক্ষেপ কী হতে পারে।
অ্যানিমিয়া কী?
অ্যানিমিয়া হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে শরীরে স্বাভাবিকের তুলনায় লোহিত রক্তকণিকা (RBC) বা হিমোগ্লোবিন কম থাকে। লোহিত রক্তকণিকার কাজ হলো শরীরের প্রতিটি অংশে অক্সিজেন পৌঁছে দেওয়া। যখন এই কোষ বা হিমোগ্লোবিন কমে যায়, তখন শরীর পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায় না এবং নানারকম উপসর্গ দেখা দেয়।
অ্যানিমিয়ার সাধারণ কারণ
আয়রনের ঘাটতি: সবচেয়ে প্রচলিত কারণ, বিশেষ করে নারীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।
ভিটামিন বি১২ বা ফোলেটের ঘাটতি: সঠিক ডায়েট না মানা বা শোষণ সমস্যার কারণে হয়।
দীর্ঘমেয়াদী রক্তক্ষরণ: পাকস্থলীর আলসার, পাইলস, ভারী মাসিক ইত্যাদির কারণে হতে পারে।
ক্রনিক ডিজিজ: যেমন কিডনি রোগ বা লিভারের অসুখ।
হাড়ের মজ্জার সমস্যা: যেখানে স্বাভাবিকভাবে রক্ত তৈরি হয় না।
অ্যানিমিয়ার সাধারণ লক্ষণ
অতিরিক্ত ক্লান্তি ও দুর্বলতা
মাথা ঘোরা বা শ্বাসকষ্ট
ত্বক ও ঠোঁট ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া
বুক ধড়ফড় করা
হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া
অধিকাংশ সময় এগুলো সাধারণ অ্যানিমিয়ার লক্ষণ হলেও দীর্ঘস্থায়ী হলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
অ্যানিমিয়া ও ক্যান্সারের সম্পর্ক
প্রথমেই পরিষ্কার করা দরকার- সাধারণ অ্যানিমিয়া ক্যান্সারে রূপ নেয় না। তবে কিছু ক্ষেত্রে অ্যানিমিয়া ক্যান্সারের প্রাথমিক সংকেত হতে পারে। অর্থাৎ, অ্যানিমিয়া থাকাটা ক্যান্সারের কারণ নয়, বরং ক্যান্সারের কারণে অ্যানিমিয়া হতে পারে।
যে ক্যান্সারে অ্যানিমিয়া দেখা দেয়
ব্লাড ক্যান্সার (যেমন AML, লিউকেমিয়া, মাল্টিপল মায়েলোমা): হাড়ের মজ্জা স্বাভাবিক রক্তকণিকা তৈরি করতে পারে না, ফলে অ্যানিমিয়া হয়।
পাকস্থলীর ক্যান্সার বা কোলন ক্যান্সার: দীর্ঘ সময় লুকিয়ে রক্তক্ষরণ হতে পারে, ফলে শরীরে ধীরে ধীরে অ্যানিমিয়া দেখা দেয়।
কিডনি ক্যান্সার বা অন্য অঙ্গের ক্যান্সার: দীর্ঘস্থায়ী অসুখ ও শরীরের ভেতরে ক্যান্সার কোষ বৃদ্ধির কারণে লোহিত রক্তকণিকা নষ্ট হয়ে যায়।
তাই, দীর্ঘদিন ধরে অ্যানিমিয়া থাকলে এবং সাধারণ চিকিৎসায় না সাড়লে ক্যান্সারের সম্ভাবনা অবশ্যই পরীক্ষা করতে হবে।
কোন লক্ষণে সতর্ক হবেন?
সাধারণ আয়রন বা ভিটামিন চিকিৎসায় উন্নতি না হওয়া
ঘন ঘন জ্বর বা সংক্রমণ হওয়া
শরীরে সহজে কালশিটে পড়া বা অকারণে রক্তপাত হওয়া
অস্বাভাবিক ওজন কমে যাওয়া
হাড়ে ব্যথা বা শরীরের কোনো অংশে ফোলা থাকা
লসিকা গ্রন্থি বড় হয়ে যাওয়া
এসব লক্ষণ থাকলে দ্রুত পরীক্ষা করা জরুরি, কারণ এগুলো ব্লাড ক্যান্সারের প্রাথমিক সংকেত হতে পারে।
সঠিক পদক্ষেপ কী?
১. রক্ত পরীক্ষা করুন
একটি সাধারণ Complete Blood Count (CBC) রিপোর্ট থেকেই বোঝা যায় অ্যানিমিয়ার মাত্রা। প্রয়োজনে আয়রন প্রোফাইল, ভিটামিন বি১২ বা ফোলেট পরীক্ষা করতে হয়।
২. কারণ বের করুন
অ্যানিমিয়ার মূল কারণ খুঁজে বের করাই সবচেয়ে জরুরি। শুধু হিমোগ্লোবিন কম আছে বলে আয়রন খেয়ে যাওয়াই যথেষ্ট নয়।
৩. বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
যদি দীর্ঘদিন ধরে অ্যানিমিয়া থাকে, তবে একজন হেমাটোলজিস্ট এর পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
৪. প্রয়োজনে বোন ম্যারো টেস্ট
যদি ব্লাড ক্যান্সারের সন্দেহ থাকে, তবে হাড়ের মজ্জার পরীক্ষা (Bone Marrow Test) করতে হতে পারে।
৫. জীবনধারার পরিবর্তন
সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন
আয়রন ও ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার খান
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন
অ্যানিমিয়া থেকে ক্যান্সার নিয়ে সাধারণ প্রশ্ন
প্রশ্ন: অ্যানিমিয়া কি সবসময় ক্যান্সারের লক্ষণ?
না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অ্যানিমিয়া আয়রন ঘাটতি বা অন্য সাধারণ কারণে হয়ে থাকে।
প্রশ্ন: আয়রন ঘাটতির অ্যানিমিয়া কি ক্যান্সারে রূপ নেয়?
না। তবে চিকিৎসা না করলে জটিলতা বাড়তে পারে।
প্রশ্ন: দীর্ঘমেয়াদী অ্যানিমিয়া থাকলে কী করবেন?
দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যান এবং কারণ বের করতে পরীক্ষা করান।
অ্যানিমিয়া সাধারণত একটি চিকিৎসাযোগ্য রোগ। তবে যদি এটি দীর্ঘমেয়াদী হয়, সাধারণ চিকিৎসায় না সারে বা অস্বাভাবিক উপসর্গ দেখা দেয়, তবে এটি হতে পারে ব্লাড ক্যান্সারের সতর্কবার্তা। তাই অ্যানিমিয়াকে হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়। সময়মতো চিকিৎসা নিলে জীবন রক্ষা করা সম্ভব।
আপনি বা আপনার পরিবারের কেউ যদি দীর্ঘদিন ধরে অ্যানিমিয়ায় ভুগে থাকেন এবং সাধারণ চিকিৎসায় উপকার না পান, তবে দেরি করবেন না। একজন অভিজ্ঞ হেমাটোলজিস্ট চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করুন। সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপই পারে আপনাকে ক্যান্সারের ঝুঁকি থেকে রক্ষা করতে।
সহযোগী অধ্যাপক (হেমাটোলজি)
ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল
Contact
Copyright @ 2025 Dr Arif Ur Rahman | Developed by The YOLO Lab


Stay Connected
জয়েন করুন